শবেবরাত এর ব্যাপারে মহানবী (সা.) যা বলেছেন

Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated

 শবেবরাত এর ব্যাপারে মহানবী (সা.) যা বলেছেন



হাদিসের পরিভাষায় শবেবরাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা মধ্য শাবানের রজনী বলা হয়। তাফসিরের কিতাব, হাদিসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও ফিকহের গ্রন্থগুলোতে শবেবরাতের আরো কিছু নাম এসেছে। যেমন, ‘লাইলাতুল কিসমাহ’ বা ভাগ্যরজনী, ‘লাইলাতুল আফউ’ বা ক্ষমার রাত, ‘লাইলাতুত তাওবাহ’ বা তাওবার রাত, ‘লাইলাতুল ইৎক’ তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত, ‘লাইলাতুত দোয়া’ তথা প্রার্থনার রাত।

  • শবেবরাতের ফজিলত

শবেবরাতের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

এক হাদিসে এসেছে, হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মধ্য শাবানের রাতে—অর্থাৎ শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষী লোক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫৬৬৫, আল মু’জামুল কাবীর : ২০/১০৯, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৬৬২৮)

  • আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয় যারা

শবেবরাত অনেক বরকতপূর্ণ হলেও কিন্তু কিছু লোক এমন আছে, যারা এ রাতের ফজিলত ও বরকত থেকে বঞ্চিত থাকে। এ পবিত্র রাতে কয়েক শ্রেণির লোকের জন্য দয়া ও ক্ষমার দরজা বন্ধ থাকে। এক. মুশরিক (যে আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক করে)।

দুই. হিংসা-বিদ্বেষপোষণকারী। তিন. ডাকাত। চার. মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান। পাঁচ. অন্যায়ভাবে হত্যাকারী।
ছয়. জিনা-ব্যভিচারকারী। সাত. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী। আট. টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী। নয়. মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি। (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৫৪৪-৩৫৪৫-৩৫৫৫-৩৫৫৬)

  • যেসব রাতে বান্দার দোয়া ব্যর্থ হয় না

শবেবরাতসহ কয়েকটি রাতে দোয়া কবুলের কথা হাদিসে এসেছে।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এমন পাঁচটি রাত রয়েছে, যেগুলোতে আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া ফিরিয়ে দেন না। সে রাতগুলো হলো, জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের ১৫ তারিখের রাত, দুই ঈদের রাত।’ (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ৬০৮৭, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৪৪০, মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৯২৭)

  • শবেবরাতে কবর জিয়ারত 

শবেবরাতে মাঝে মাঝে কবর জিয়ারত করাও প্রমাণিত। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুল (সা.) মধ্য শাবানের রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’-তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করতেন।’ তিনি বলেন, ‘এ রাতে মহান আল্লাহ বনি কালবের বকরির পশমের সংখ্যার চেয়েও বেশিসংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭৩৯, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৭৯, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৫৪৪)

  • শবেবরাত সম্পর্কে আলেমদের মতামত

আল্লামা তকি উসমানি (দা.বা.) লিখেছেন, ‘শবেবরাতের ফজিলত ১০ জন সাহাবি থেকে বর্ণিত হয়েছে। এর মাধ্যমে এ রাতের বিশেষ গুরুত্ব প্রমাণিত হয়। এ বিষয়ে কয়েকটি হাদিস বর্ণনা সূত্রের দিক থেকে সামান্য দুর্বল। এসব সনদ বা সূত্র দেখে কেউ কেউ বলে দিয়েছেন, এ রাতের ফজিলতের কোনো ভিত্তি নেই! অথচ মুহাদ্দিস ও ফকিহদের সিদ্ধান্ত হলো, কোনো বর্ণনার সূত্র দুর্বল হলে এর সমর্থক হাদিস থাকলে তার দুর্বলতা কেটে যায়। তবে স্মরণ রাখতে হবে যে শবেবরাতের স্বতন্ত্র কোনো ইবাদত নেই আর এ রাতের জন্য ইবাদতের আলাদা কোনো নিয়মও নেই।’ (মাসিক আল-বালাগ, শাবান, ১৪৩১ হিজরি)

আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি (রহ.) ও নাসিরুদ্দিন আলবানি (রহ.)-এর মতে, শবেবরাতের ফজিলত বিষয়ে বর্ণিত হাদিস সহিহ ও বিশুদ্ধ। (আরফুশশাজ্জী : ১/১৫৬, সিলসিলাতুছ সহিহাহ : ৩/১৩৫)

  • মহানবী (সা.) শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন 

এ ছাড়া শাবান মাসজুড়ে রোজা রাখার বিশেষ ফজিলতের কথা হাদিস শরিফে রয়েছে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি নবী করিম (সা.)-কে শাবান মাসের মতো এত অধিক রোজা আর অন্য কোনো মাসে রাখতে দেখিনি। এ মাসের অল্প কয়েক দিন ছাড়া সারা মাসই তিনি রোজা রাখতেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭৩৭)

উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) নবীজি (সা.)-কে শাবান মাসে অধিক রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ মানুষ এ মাসের ব্যাপারে উদাসীন থাকে। অথচ এটি এমন একটি মাস, যে মাসে আল্লাহর কাছে বান্দাদের আমলনামা পেশ করা হয়। অতএব আমি চাই, আমার আমলনামা এমন অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২১৭৫৩, নাসাঈ, হাদিস : ২৩৫৭)

  • আল্লাহর কাছে বান্দার আমল উপস্থাপন

মানুষের আমল আল্লাহর কাছে তিন স্তরে উপস্থাপন করা হয়। দৈনিক, সাপ্তাহিক ও বাৎসরিক। প্রতিদিন ফজরের নামাজের সময় ও আসরের নামাজের সময় আল্লাহর কাছে বান্দার আমল পেশ করা হয়। বুখারি ও মুসলিম শরিফের একটি হাদিস থেকে জানা যায়, ফেরেশতারা রাতে ও দিনে পালাক্রমে মানুষের কাছে আসেন। রাতের বেলা যে ফেরেশতারা থাকেন, তাঁরা ফজরের সময় চলে যান। সে সময় দিনের ফেরেশতারা আসেন। তাঁরা আসরের সময় চলে যান। সে সময় রাতের ফেরেশতারা আসেন। ফেরেশতারা যাওয়ার পর আল্লাহ তাআলা জানা সত্ত্বেও তাঁদের জিজ্ঞেস করেন, তোমরা আমার বান্দাদের কোন অবস্থায় রেখে এসেছ? তাঁরা জবাব দেয়, আমরা যখন তাদের কাছে পৌঁছি তখন তারা নামাজরত ছিল। আর যখন তাদের কাছ থেকে ফিরে আসি তখনো তারা নামাজরত আছে।

সপ্তাহের প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর কাছে বান্দার আমল পেশ করা হয়। আর বাৎসরিক বলতে শাবান মাসে আল্লাহর কাছে বান্দার আমল পেশ করা হয়। তাই শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা ও নফল ইবাদত করার বিশেষ তাগিদ রয়েছে।

তা ছাড়া ‘আইয়ামে বিজ’ তথা প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার ব্যাপারেও হাদিস শরিফে উৎসাহিত করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘প্রিয় নবী (সা.) আমাকে তিনটি জিনিসের অসিয়ত করে গেছেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে—প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ তিনটি রোজা রাখা।’ (বুখারি, হাদিস : ১১২৪, মুসলিম, হাদিস : ১১৮২)

  • শাবানের ১৫ তারিখ রোজা সুন্নত

একটি হাদিসে ১৫ শাবান রোজা রাখার নির্দেশনা রয়েছে। হজরত আলী (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘১৫ শাবানের রাত যখন হয়, তোমরা রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে পালন করো এবং দিনের বেলা রোজা রাখো। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ প্রথম আসমানে এসে বলেন, ‘কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিক অন্বেষণকারী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দেব। আছে কি কোনো রোগাক্রান্ত? আমি তাকে আরোগ্য দান করব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে তাদের ডাকতে থাকেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৮৮)

  • শবেবরাতে যেসব আমল করা যায়

শবেবরাতের নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত ও আমল নেই। তবে এ আমলগুলো করা যায়—এশা ও ফজর নামাজ ওয়াক্তমতো জামাতের সঙ্গে আদায় করা, যথাসম্ভব নফল ও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা, সম্ভব হলে অতীত জীবনের কাজা নামাজ ও সালাতুত তাসবিহ আদায় করা। পবিত্র কোরআন বেশি বেশি তিলাওয়াত করা, বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা, বেশি করে দোয়া করা, মাঝে মাঝে শবেবরাতে কবর জিয়ারত করা, পরের দিন রোজা রাখা। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হাফেজ ইবনে রজব (রহ.) বলেন, ‘এ রাতে জিকির ও দোয়ার জন্য পুরোপুরি অবসর হবে। প্রথমে খাঁটি মনে তাওবা করবে। এরপর মাগফিরাত ও ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আপদ-বিপদ দূর হওয়ার জন্য দোয়া করবে ও নফল নামাজ পড়বে।’ (লাতায়িফুল মাআরিফ : ১/১৩৮)

গোটা রাত জাগা সম্ভব না হলে রাতের বেশির ভাগ সময় ইবাদতে মশগুল থাকতে চেষ্টা করা উচিত। তা-ও সম্ভব না হলে শেষ রাতের সময়টুকুকে কিছুতেই অবহেলা করা যাবে না। আর এ বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে, রাতের নফল ইবাদতের কারণে যেন ফজরের ফরজ নামাজ ছুটে না যায়।

বিশুদ্ধ মতানুসারে শবেবরাত ও শবেকদরের নফল আমলগুলো একাকী করণীয়। ফরজ নামাজ অবশ্যই মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার, তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। বিভিন্ন হাদিস থেকে এ রাতে দীর্ঘ নামাজ পড়া, সিজদা দীর্ঘ হওয়া, দোয়া-ইস্তেগফার করার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। (শুআবুল ঈমান, বায়হাকি : ৩/৩৮২, ৩৮৩)

এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার প্রমাণ নেই। সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। তবে হ্যাঁ, যদি কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়া কয়েকজন মানুষ মসজিদে একত্র হয়ে যায়, তাহলে তারা একাকী ইবাদত করবে। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : সিইও, সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনমিক সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

Post a Comment

𝐂𝐨𝐨𝐤𝐢𝐞 𝐂𝐨𝐧𝐬𝐞𝐧𝐭!
𝐖𝐞 𝐬𝐞𝐫𝐯𝐞 𝐜𝐨𝐨𝐤𝐢𝐞𝐬 𝐨𝐧 𝐭𝐡𝐢𝐬 𝐬𝐢𝐭𝐞 𝐭𝐨 𝐚𝐧𝐚𝐥𝐲𝐳𝐞 𝐭𝐫𝐚𝐟𝐟𝐢𝐜, 𝐫𝐞𝐦𝐞𝐦𝐛𝐞𝐫 𝐲𝐨𝐮𝐫 𝐩𝐫𝐞𝐟𝐞𝐫𝐞𝐧𝐜𝐞𝐬, 𝐚𝐧𝐝 𝐨𝐩𝐭𝐢𝐦𝐢𝐳𝐞 𝐲𝐨𝐮𝐫 𝐞𝐱𝐩𝐞𝐫𝐢𝐞𝐧𝐜𝐞.
𝐎𝐨𝐩𝐬!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা হয়েছে। অনুগ্রহ করে পুনরায় ইন্টারনেট সংযোগ করে, আবার ব্রাউজ করা শুরু করুন। ধন্যবাদ