আমাদের প্রিয় নবী (সা.) শবে বরাত যেভাবে কাটাতেন

Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated

 আমাদের প্রিয় নবী (সা.) শবে বরাত যেভাবে কাটাতেন


মুসলমানদের জন্য অন্যতম বরকতময় একটি রাত শাবান মাসের ১৪ তারিখের দিবাগত রাত। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশে যা ‘শবে বরাত’ নামেই অধিক পরিচিত। শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। শব মানে রাত আর বরাত মানে মুক্তি; অর্থাৎ শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। ‘শবে বরাত’-এর আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারকাত’। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী বলা হয়েছে।

আরবি দিনপঞ্জিকার হিসেবে আজ (২৫ ফেব্রুয়ারি) সেই শবে বরাত। আজকের রাতের ফজিলত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আলী বিন আবু তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘অর্ধ শাবানের রাত তোমরা ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখো। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে এসে বলেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিক অন্বেষণকারী আছো কি? আমি তাকে রিজিক প্রদান করবো। আছো কি কোনো রোগাক্রান্ত? আমি তাকে আরোগ্য দান করবো। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে তাদের ডাকতে থাকেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৮৮)

মুফাসসিরিনগণের ভাষ্য অনুযায়ী, শাবান মাসের ১৪ তারিখের এ সম্পূর্ণ দিনটি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাতেন মহানবী (সা.)। পুরো রাত জেগে ইবাদত করতেন তিনি। রাতভর মশগুল থাকতেন নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল পাঠ, তওবা-ইস্তেগফার ইত্যাদি আমলে।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) এর বর্ণনা অনুযায়ী রাসুল (সা.) বলেন, পাঁচটি রাত এমন আছে, যে রাতে বান্দার কোনও দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না। আর তা হলো- জুমার রাতের দোয়া, রজব মাসের প্রথম রাতের দোয়া, নিসফা শাবান তথা অর্ধ শাবানের রাতের দোয়া, ঈদুল ফিতর তথা রোজার ঈদের রাতের দোয়া, ঈদুল আজহা তথা কুরবানির ঈদের রাতের দোয়া।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ৭৯২৭)।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) রাতে নামাজে দাঁড়িয়ে এত দীর্ঘ সময় সেজদায় রইলেন যে, আমার ধারণা হলো, হয়তো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। তখন আমি তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিয়ে দেখলাম। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা, ওহে হুমাইরা! তোমার কি আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না হে আল্লাহর রাসুল! আপনার দীর্ঘ সেজদায় আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত অর্থাৎ শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত। আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন, বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই’ (শুয়াবুল ঈমান : ৩৫৫৪)। শবে বরাতে নবীজি (সা.) রাতভর ইবাদত করতেন এবং দিনের বেলা রোজা রাখতেন। উম্মে সালমা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে শাবান ও রমজান ছাড়া দুই মাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি। (আবু দাউদ : ২৩৩৬)

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুণাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৭৩৯)।

শবে বরাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করা। কারণ, বরকতময় এই রাতে আল্লাহ তায়ালা প্রথম আকাশে এসে বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন। তাদের গোনাহগুলো মাফ করেন। হাদিস শরিফে বিবৃত হয়েছে, রাসুল (সা.) বললেন, ‘যখন অর্ধ শাবানের রাত আসে তখন আল্লাহ তায়ালা প্রথম আকাশে অবস্থান করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া অন্যদের ক্ষমা করে দেন।’ (মুসনাদে বাজজার : ৮০)

তবে এ রাতকে কেন্দ্র করে ভিত্তিহীন কোনও কাজ করা যাবে না। হাদিস শরিফে শবে বরাতে রাসুল (সা.) থেকে বিশেষ পদ্ধতির কোনও ইবাদত প্রমাণিত নেই এবং সাহাবায়ে কেরামদের থেকেও এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।

আসুন, আমরা অর্থনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতিতে রাসুলুল্লাহ (স.) এর উম্মত হিসেবে এই রাতে আল্লাহর দিকে মনোযোগী হই, বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং বিশুদ্ধ আমলের মাধ্যমে শবে বরাতের ফজিলত, বরকত ও মাগফিরাত হাসিল করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন।

Post a Comment

𝐂𝐨𝐨𝐤𝐢𝐞 𝐂𝐨𝐧𝐬𝐞𝐧𝐭!
𝐖𝐞 𝐬𝐞𝐫𝐯𝐞 𝐜𝐨𝐨𝐤𝐢𝐞𝐬 𝐨𝐧 𝐭𝐡𝐢𝐬 𝐬𝐢𝐭𝐞 𝐭𝐨 𝐚𝐧𝐚𝐥𝐲𝐳𝐞 𝐭𝐫𝐚𝐟𝐟𝐢𝐜, 𝐫𝐞𝐦𝐞𝐦𝐛𝐞𝐫 𝐲𝐨𝐮𝐫 𝐩𝐫𝐞𝐟𝐞𝐫𝐞𝐧𝐜𝐞𝐬, 𝐚𝐧𝐝 𝐨𝐩𝐭𝐢𝐦𝐢𝐳𝐞 𝐲𝐨𝐮𝐫 𝐞𝐱𝐩𝐞𝐫𝐢𝐞𝐧𝐜𝐞.
𝐎𝐨𝐩𝐬!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা হয়েছে। অনুগ্রহ করে পুনরায় ইন্টারনেট সংযোগ করে, আবার ব্রাউজ করা শুরু করুন। ধন্যবাদ